নিষিদ্ধ চত্বর’- নাম শুনলেই যেন মনে প্রশ্ন জাগে এটা আবার কী? এই নামে কি আবার কোনো চত্ত্বর হতে পারে কিনা? হ্যাঁ, শুনতে অদ্ভূত মনে হলেও এ চত্বরটির দেখা মিলবে বশেমুরবিপ্রবিতে। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক চত্বরে রয়েছে আজব এই নিষিদ্ধ চত্ত্বর। যেখানে মিশে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য প্রমিক যুগলের সুখ-দুখের নানা কাহিনী। হয়ে আছে যেন এক জীবন্ত প্রেমের সাক্ষী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রেমিক-প্রেমিকারা রোমান্টিক গল্পে মেতে উঠে এই নিষিদ্ধ চত্বরে। যেখানে শুরু হয়েছিল শত প্রেমের সূচনা আবার নিভে গিয়েছিল কপোত-কপোতীর গল্পে জমে উঠা কত শত প্রেমের প্রদীপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের মধ্যবর্তী সড়ক পাড় হলেই দেখা মিলবে বশেমুরবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মাঠ। এর উত্তরে পাশাপাশি রয়েছে ছাত্রীদের শেখ রেহানা ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল। এর পাশেই রয়েছে ছায়া ঘেরা সুবিশাল রাস্তা। যা একেবারে পূর্ব দিকের কৃত্রিম পাহাড় ঘেঁষে লেকপাড়ে গিয়ে মিশেছে।
সুবিশাল এই রাস্তা আর এর দু’পাশের গাছপালা ঘেরা ছায়ামণ্ডিত স্থানকেই বলা হয় নিষিদ্ধ চত্বর। রাস্তার দু’পাশ ঘেঁষে সুউচ্চ শিরীষ ও শিশু গাছগুলো মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর। আর সেসব গাছে অহর্নিশ লেগে থাকে হরেক রকম পাখীর কুঞ্জন। একটু সামনে তাকালেই দেখা যায় দিগন্ত বিস্তৃত ধান খেত। এর মধ্যে সবসময় বয়ে যাওয়া মৃদু বাতাস মনকে দেয় আরো প্রশান্তি। চারদিকে সারি সারি ইউক্যালিপটাস গাছ জায়গাটিকে দিয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। প্রকৃতির অপরূপ মায়াবী দৃশ্য জমে আছে চত্বরটির চারপাশে। মন খারাপের সময় পাখির কোলাহল আর প্রকৃতির সৌন্দর্য হৃদয় ছুঁয়ে মন ভালো করে দিবে অজস্র ভালোবাসায়।
তালিকাভুক্তির পরপরই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়া বা নো লভ্যাংশ ঘোষণা করা এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্সের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গতকাল জরুরি বৈঠক করেছে বিএসইসি। বৈঠকে তালিকাভুক্তির পরপরই মুনাফা করার পরও বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘটনায় বিএসইসির পক্ষ থেকে কারণ জানতে চাওয়া হয়।
গত মাসে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে বৈঠকের পর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সুখবর দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।
মন চাইলে প্রিয়জনকে বা প্রিয়জনদের নিয়ে চত্বরটির লেক পাড়ে পার করা যায় ভালোবাসার কিছু মধুর সময় কিংবা কৃত্রিম পাহাড়ের সরুপথ ধরে হেঁটে যাওয়া যায় কাল থেকে মহাকালের পথে। সবকিছু মিলিয়ে জায়গাটিতে গ্রাম বাংলার অপরূপ ছবির দেখা মিলে। এছাড়াও চত্বরটির আশপাশে বসার জন্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কাঠ ও প্লাস্টিকের নির্মিত রং-বেরঙের বেঞ্চ। বসার এই বেঞ্চগুলোতে সারাদিনই ভিড় লেগে থাকে। কেউ কেউ জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে ঘাসের উপরেই বসে পড়েন।
আবার বিকেল হলে বেশকিছু ফুড কার্ট আর ভ্রাম্যমাণ দোকানের দেখা মিলে। এসব দোকান যেনো আড্ডার রসদ জোগায়। জায়গাটির নাম নিষিদ্ধ চত্বর’ কেনো তা নিয়ে কোন সুস্পষ্ট মত নেই। তবে বেশিরভাগের মতেই ছাত্রী হল সংলগ্ন এই জায়গাটিতে প্রায় সময়ই প্রেমিক যুগলদের আনাগোনা থাকে বলে ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষার্থীরা মজা করে নাম দেয় নিষিদ্ধ চত্বর’। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সবাই নিষিদ্ধ চত্বর হিসেবে জায়গাটিকে চিনে।
এ বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুকান্ত বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, নিষিদ্ধ চত্বরের মতো এমনি অনেক চত্বর আছে যেগুলো শিক্ষার্থীরা মজাচ্ছলে নামকরণ করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা-কলমে প্রাতিষ্ঠানিক এর কোনো রুপ নাই। ক্যাম্পাস খোলা থাকাকালীন জায়গাটিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রেমিক যুগলদের পাশাপাশি আড্ডা চলে বন্ধু ও সহপাঠীদের মধ্যে।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই নন, বহিরাগত ছেলেমেয়েরাও এখানে দল বেঁধে আড্ডা জমান। তবে করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রায়ই জায়গাটিতে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বহিরাগত প্রেমিক যুগলদের দেখা মেলে। এদিকে পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবসসহ আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ দিবসে জায়গাটিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
কথা হয় আড্ডরত কয়েকজন স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা জানান, ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই জায়গাটির নাম নিষিদ্ধ চত্বর শুনে এসেছেন। অদ্ভুত এই নামটি বারবার শুনতে শুনতে এখন আর অদ্ভুত মনে হয় না। বরং আড্ডার জন্য পছন্দের জায়গা এটি। বিকেল বেলা এখানে বসে আড্ডা দেয়া মনের প্রশান্তি যোগায়। তাইতো ছুটির দিনেও এর স্নিগ্ধতার টানে প্রায় প্রতিদিনই ছুটে আসি। বন্ধের দিনে সারাদিন একঘেয়েমি শেষে নিষিদ্ধ চত্বরের একটি নির্মল বাতাসে, যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেদ জানান, নিষিদ্ধ চত্বরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে অনেক ভালো লাগে। বিকেল বেলার বাতাস ক্লান্ত শরীরে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। ছোট ছোট গ্রুপে সব বন্ধুরা যখন আড্ডা দেয় যা দেখতেও ভালো লাগে। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যখন চলে যাবো তখন এই নিষিদ্ধ চত্বরের আড্ডা খুব মিস করব।
এদিকে বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে প্রিয় মানুষটির সঙ্গেদেখা হওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছে ক্যাম্পাসের প্রেমিক যুগলেরা। সেই স্বপ্নের দিনটির জন্য ছটফট করছে তাদের হৃদয়। তেমনি একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা মিমি । তিনি বলেন, অনেকদিন হয়েছে করোনা আতংকের বন্ধে বাড়িতে অবস্থান করছি। তবে প্রতিদিনই খুব মিস করছি নিষিদ্ধ চত্বরে বসে প্রিয় মানুষটির সাথে আড্ডা দেয়ার কথা। মনকে পরিষ্কার জন্য সময় পেলেই নিষিদ্ধ চত্বরের চলে যেতাম। থাকতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শুধু ইচ্ছে হয় নিষিদ্ধ চত্বরের লেকপাড় ও পাহাড়ে একটু স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলার জন্য হলেও ক্যাম্পাসে ফিরে যাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যারা চলে গেছেন তারাও মিস করেন নিষিদ্ধ চত্বরের আড্ডা। এমনই একজন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুন্না সাইদুল বলেন, নিষিদ্ধ চত্বর নামটা শুনলে মনের ভেতর বিশেষ এক অনুভূতির জাগরণ ঘটে। বিশেষ করে এই স্থানটিতে লেক পাড়ের সুনির্মল বাতাস আর মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বন্ধুদের সাথে কাটানো সময় গুলো খুব মিস করি। তাছাড়া নিষিদ্ধ চত্বরের পাশেই আছে বঙ্গবন্ধু স্কুল। সেই স্কুলে ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলাধুলা, মা বাবার হাত ধরে স্কুলে আসা যে কাউকেই তার অতীতের ছোট বেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। যদিও চত্বরটির নাম নিষিদ্ধ, কিন্তু জায়গাটির সৌন্দর্য আমদের কাছে বেশ প্রসিদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কেউ চলে গেলে এই নিষিদ্ধ চত্বরের টানে হলেও ফিরে আসবে বশেমুরবিপ্রবির বুকে। ফিরে আসবে তাদের কত শত স্বপ্নজালে বোনা স্মৃতি আর স্বপ্ন ভাঙ্গার সাক্ষী এই চত্বরে। তাইতো নিষিদ্ধ চত্বর শুধু সৌন্দর্যে ঘেরা নয়, এ যেন হাজারো ভাস্বর প্রেমের সাক্ষী।
ঢাকা: সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা তাপমাত্রা বাড়তে পারে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি)…